• মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৬ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

কুমিল্লায় বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২৪  

টানা ভারী বর্ষণের ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে কুমিল্লায় বন্যায় কৃষি বিভাগের ৮৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর ফসলি জমি। বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কৃষি বিভাগ জানান, জেলার ১৪ উপজেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ করা হয়েছিল। বন্যায় ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব ফসলের মধ্যে রোপা আমন বীজতলা ৪ হাজার ৫১৫ হেক্টর ও ধান ২৩ হাজার ৩০৯ হেক্টর, শাকসবজি ২ হাজার ১৯ হেক্টর, রোপা আউশ ৩৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর, বোনা আমন ৩৩৫ হেক্টর এবং ২১৬ হেক্টর আখ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৬৪১ হেক্টর রোপা আমন, ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর খরিপ শাকসবজি, ২০ হাজার হেক্টর রোপা আউশ এবং ১১ হেক্টর আখ ফসলের জমি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।
বন্যার পানিতে তলিয়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০৪ হেক্টর শাকসবজি, ১৩ হাজার ৪৩২ হেক্টর রোপা আউশ এবং ২০৫ হেক্টর আখ ফসলের জমি। ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে আছে ২২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার রোপা আমন বীজতলা, ২৬৯ কোটি ৯৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকার রোপা আমন, ৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শাকসবজি, ২৯৭ কোটি ৮৫ লাখ ৭২ হাজার টাকার রোপা আউশ এবং ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকার আখের ফসল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার জুরাইন, খাড়াতাইয়া, নানুয়ার বাজার, কিং বাজেহুরা, মিথিলাপুর, শিকারপুর, মহিষমারা, ইছাপুরা, পয়াত, গাজীপুর, কণ্ঠনগর, মাওরা, গোপীনাথপুর, জগৎপুর ও গোসাইপুর, বেড়াজাল, শ্যামপুর, গোবিন্দপুর সহ আরো বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গিয়েছে পানিতে। পাশাপাশি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া, চান্দলা ইউনিয়ন সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নানকরা, ফালগুনকরা, আটগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট উত্তর, রায়কোট দক্ষিণ, বাঙ্গড্ডাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন তলিয়ে গিয়েছে বন্যার পানিতে।  এদিকে, কৃষি জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দূর্ভোগ ও হতাশায় আছেন কৃষি কাজ করা এ জেলার নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরাও। চর ডুবে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছে, প্রথম দফা বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠে আমন রোপণ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে গেছে। ব্রাক্ষণপাড়ার গ্রামের কৃষক শাহাদাৎ হোসেন জানান, তাঁর দুই একর জমি আবাদের জন্য তৈরি করা বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে। তিতাস উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, আমার ১৮ বিঘা ধান পানিতে তলাইয়া গেছে। আমি এনজিও ঋণ আইনা ধান লাগাইছিলাম। আমার মতো অনেকেই বিভিন্ন জায়গা ঋণ কইরা ধান লাগাইছে। এহন ঋণের টাকা শোধ করমু কেমনে ? সরকার যদি আমাগো দিকে না তাকায় তয় মইরা যামু।  বুড়িচংয়ের জুরাইন এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হোসেন বাসসকে বলেন, এ বছর বৃষ্টি ভালো হওয়ায় ফসলও ভালো হবে এমন ধারণা করেছিলাম। ৫ বিঘা জমিতে ধান করেছিলাম, আবার ৩ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের শাকসবজি করেছিলাম। এখন বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গেলো। এতদিন পানির নিচে থাকায় আর কিছু টিকবে না। কি খেয়ে বাঁচবো, সংসার চলবে কি করে। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভাসমান বীজতলা, আগাম সবজি উৎপাদনের জন্য চারা প্রদান ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে আর্থিক সহায়তা করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বাসসকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। প্রতিদিনই বন্যার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমি এবং কৃষকদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া হবে।

দৈনিক জামালপুর