• সোমবার ০৮ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ২৩ ১৪৩১

  • || ৩০ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

ফের কৃচ্ছসাধন নীতি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৫ জুলাই ২০২৪  

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ফের সরকারি সব ধরনের ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন ও কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করা হয়েছে। পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক, অনাবাসিক বা অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া সব ধরনের যানবাহন ক্রয় (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক কোড উল্লেখ করে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন বাজেটের আওতায় সব ধরনের থোক বরাদ্দ থেকে খরচ বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। 
মহামারি করোনার পর থেকে সরকারি সব ধরনের ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটছে সরকার। ফলে গত কয়েক বছরে দেশে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। চলমান প্রকল্পগুলো শুধু বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়েছে। এতে করে খরচ কিছুটা কমানো গেলেও কর্মকর্তাদের জন্য ঘন ঘন অপ্রয়োজনীয় গাড়ি কেনা, বিভিন্ন প্রকল্পের অভিজ্ঞতা অর্জনে বিদেশ ভ্রমণ অব্যাহত রয়েছে। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং জেলা প্রশাসকদের জন্য নতুন গাড়ি কেনা নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয় দেশে। এর পরও অপ্রয়োজনীয় অর্থের কেনাকাটা সেভাবে বন্ধ হয়নি।

তবে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে পরিচালন বাজেট থেকে অপেক্ষাকৃত অপ্রয়োজনীয় খরচ এবং কেনাকাটা কমানোর ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ ব্যাপারে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রতিও বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিগত কয়েক বছর যাবৎ নতুন অর্থবছরের শুরুতে এ ধরনের একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। এরপর বছরের মাঝামাঝি সময়ে পরিপত্রটি কিছুটা সংশোধন ও পরিমার্জন করে প্রকাশ করা হয়। বৈশ্বিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে অর্থ বিভাগের জন্য এটি এখন এক ধরনের রুটিন হয়ে গেছে। তবে সত্যিকার অর্থে কৃচ্ছ্রসাধন হওয়া উচিত। তিনি বলেন, দেশে ডলার সংকট রয়েছে। রিজার্ভের পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। এ অবস্থায় সরকারি ব্যয়ে আরও সতর্কতা প্রয়োজন। 
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কয়েকটি খাতে টাকা খরচে মিতব্যয়ী হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। অর্থ বিভাগের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারের নিজস্ব অর্থে সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে এ ধরনের ভ্রমণ অত্যাবশ্যকীয় হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে বিদেশে ভ্রমণ করা যাবে।

যেসব ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে সেগুলো হলো- পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের দেওয়া স্কলারশিপ বা ফেলোশিপের আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অংশ নেওয়া। এ ছাড়া বিদেশী সরকার বা প্রতিষ্ঠান কিংবা উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণে এবং সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যাবে।

সেই সঙ্গে প্রিশিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) বা ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপট্যান্স টেস্টের (এফএটি) আওতায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির ২ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে জারি করা পরিপত্র কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। একান্ত অপরিহার্য হলে পিএসআই বা এফএটির আওতায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে কৃচ্ছ্রসাধনে আরও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন বাজেটের আওতায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক কোড থেকে কত অর্থ ব্যয় করা যাবে, তার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে। 
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সব ধরনের থোক বরাদ্দ থেকে ব্যয় বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক, অনাবাসিক বা অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। চলমান নির্মাণকাজ ন্যূনতম ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকলে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে।
পরিপত্রে বলা হয়, সব ধরনের যানবাহন ক্রয় (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরনো ‘টিওঅ্যান্ডই’ভুক্ত যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে যেভাবে ব্যয় করা যাবে, পরিপত্রে সে বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে ‘জিওবি (বাংলাদেশ সরকার) বাবদ’ সংরক্ষিত এবং মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুকূলে ‘থোক বরাদ্দ’ হিসেবে সংরক্ষিত জিওবির সম্পূর্ণ অংশ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর