• বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৮ ১৪৩১

  • || ০৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দুর্বল ব্যাংককে আর তারল্য দেবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৪  

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আর বেআইনিভাবে তারল্য বা অন্য কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘দুর্বল বা সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোয় এত দিন যা হওয়ার, তা হয়েছে। এখন ওই ব্যাংকগুলো উদ্ধারের প্রক্রিয়া আলাদা হবে। তবে ব্যাংকগুলো থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যেন আর টাকা সরাতে না পারেন, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরে ব্যাংকিং কমিশন গঠন হলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর সংখ্যা কমিয়ে বা তাদের একীভূত করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু ব্যাংক বন্ধ বা টাকা ছাপিয়ে তা সমাধান করা হবে না। যদি আমানতকারীরা এস আলমের দখল করা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে যায়, সেটি তাদের বিষয়। আমাদের কিছু করার নেই। কারণ আমানতকারীরা কে কোথায় টাকা রাখবেন, সেটি তাদের অধিকার।’

গতকাল মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যারা আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হবে না। আমাদের মূল টার্গেট অপরাধীরা, কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের জন্য ক্ষতি। অর্থনীতির জন্য ক্ষতি। কর্মসংস্থান ব্যাহত হয়, এমন কোনো পদক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংক নেবে না।’

গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাদের মাধ্যমে এবং ঠিক কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রথমে সে বিষয়ে তদন্ত হবে। এরপর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা হন, তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। শিগগিরই একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের চিন্তা করছে সরকার। ব্যাংকিং কমিশন যত দ্রুত সম্ভব ব্যাংক খাতকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথনকশা প্রদর্শন করবে।’ সরকারি ব্যাংকের অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অস্থিরতা দুর্ভাগ্যজনক।

মূল্যস্ফীতির বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘এমনিতেই আমরা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আরও একটু সংকোচন করার চিন্তা আছে। আশা করি, মুদ্রানীতি আর একটু টাইট করলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এখন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারও প্রায় স্থিতিশীল। তবে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অনেকখানি কমাতে হবে। ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি থেকে কমিয়ে ঠিক কততে নামানো যায়, সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এস আলমের মালিকানাভুক্ত ছয় ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীদের সুরক্ষার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার জন্য তারাই দায়ী। তাদের আর কোনো নগদ সহায়তা দেওয়া হবে না। ওই ব্যাংকে আমানতকারীরা এখন টাকা রাখবেন কি না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। চাইলে তারা টাকা তুলেও নিতে পারেন, আবার রাখতেও পারেন। এখানে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘এনপিএল (খেলাপি) নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক মানদ-ে যেতে চাই। ব্যবসায়ীরা এটা করতে একটু সময় চেয়েছেন, তাদের দাবির ফলে প্রভাব পড়বে রপ্তানি-আমদানিতে। আমরা বলেছি, এটা নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করব, তবে আমরা আন্তর্জাতিক মানদন্ডে যাব এতে সন্দেহ নেই।’

এক হাজার টাকার নোট বাতিলের গুঞ্জন ও টাকায় বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে গভর্নর বলেন, ‘১০০০ টাকার নোট বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। বিষয়টি আমাদের বিবেচনায়ও নেই। যখন টাঁকশালে নোট বানানোর প্রয়োজন হবে, তখন নোট ছাপানো হবে, সই যাবে।’

দৈনিক জামালপুর