• বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৮ ১৪৩১

  • || ০৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঋণের সুদ হ্রাস ও শোধের মেয়াদ বৃদ্ধি করুন

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৪  

চীন থেকে নেওয়া উচ্চ সুদের ঋণগুলোর সুদহার কমানো ও ঋণ পরিশোধে রেয়াতকাল বা সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘চীনা রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে বেইজিংয়ের মতামত দ্রুতই আমাদের জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’

চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গতকাল সচিবালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন বাংলাদেশের তরফ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।

চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অর্থ উপদেষ্টা। এ সময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঋণের সুদহার নিয়ে আমরা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, বিষয়টি দেখবেন।

তাঁকে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আরো ১০ বছর বাড়ানোর জন্য বলেছি।’
চীনা ঋণের সুদহার নিয়ে আলোচনার বিষয়ে শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, ‘সুদহার নিয়ে উপদেষ্টা মহোদয় বলেছেন, এটা যত কমানো যায় এবং পরিশোধের মেয়াদ যেন বাড়ানো হয়। তাঁরা সম্মত হয়েছেন বেইজিংয়ে আমাদের কনসার্নটা পৌঁছে দেবেন এবং শিগগিরই আমাদের জানাবেন।’

আওয়ামী লীগ সরকার যে ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণের বোঝা রেখে গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার তা কিভাবে কমাতে চায়—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা বড় প্রেশার, প্রচণ্ড প্রেশার।

কারণ এগুলো দিয়েছে ওরা চুক্তি করে। আমরা এগুলো রিভিউ করছি, দেখছি। এটা নিয়ে সতর্ক আছি। এত বড় ঋণের বোঝা নিয়ে শুরু করেছি, আমাদের জন্য খুব কঠিন। এগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করব।

সৌজন্য সাক্ষাতের পর চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে প্রথম বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’

চীনা অর্থায়নে বাংলাদেশে চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এসব প্রকল্প অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি নতুন করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার বিষয়েও কথা হয়েছে।’

চীনা ঋণের সুদহার নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশের দিক থেকে ঋণের সুদ হার নিয়ে যে আপত্তি উঠেছে, তা নিয়েও কথা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।’

গত আট বছরে ২৭টি প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন। এর মধ্যে ১০টি প্রকল্প বাংলাদেশ গ্রহণ করে। এর মধ্যে কর্ণফুলী টানেল, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার, ফোর টায়ার জাতীয় ডাটা সেন্টার নির্মাণসহ চারটির কাজ শেষ হয়েছে।

পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ, চট্টগ্রামের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং, ঢাকা আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, পিজিসিবির আওতায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন, ডিপিডিসির আওতায় বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা এবং রাজশাহীতে ওয়াসার ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ প্রকল্প চলমান আছে।

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা গতকাল চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের পর কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

পরে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই অ্যাম্বাসাডরের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়গুলো আমরা অব্যাহত রাখব। তাঁদের কাছে অনুরোধ করেছি, কারিগরি ও আর্থিক সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য। তাঁরা নিশ্চিত করেছেন, সাধারণত যতটুকু করে তার চেয়ে বেশি করবেন।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তাদের কিছু কিছু বিষয় থাকতে পারে, আমরা দ্রুত সেগুলো চিহ্নিত করব। ভবিষ্যতে যে অর্থ আসবে তা যেন মানুষের কল্যাণে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার হয়, তা দেখব। সময়মতো যেন ব্যবহার হয় এবং গুণগত মান যেন কোনোভাবে ব্যাহত না হয়।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘আগের সরকার কিছু সমস্যা তৈরি করে গেছে। অনেক প্রকল্প না নিলেও চলত, আমাদের ওপর ঋণের বোঝা পড়েছে।’

আলোচিত তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘চীনের সঙ্গে কিছু ইস্যু আছে, কানাডার সঙ্গে কিছু ইস্যু আছে। এগুলোর আলোচনা খুব বিস্তারিত করিনি। অন্যান্য অনেক বিষয়ে কথা হয়েছে।’

 

‘হাজারের নোট বাতিল সহজ নয়’

এক হাজার টাকার নোট বাতিলের গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এগুলো নিয়ে হ্যাঁ বা না কিছুই বলা ঠিক নয়। আমরা বলি, এটা থাক। এটা নিয়ে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। সহজে এগুলোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।’

আপনি কি বলছেন এটি গুজব—এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার দিক থেকে কিছু বলিইনি। সুতরাং গুজব নিয়ে আমি কমেন্ট করব না। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাপার।’

দৈনিক জামালপুর