• বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৮ ১৪৩১

  • || ০৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঢেলে সাজানো হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২৪  

নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েই প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে প্রতিটি স্তরেই রদবদল শুরু করেছে। ফলে বাংলাদেশ সচিবালয়ে শীর্ষ পদ, বিভিন্ন সংস্থা বা দপ্তর ও মাঠ প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। পুলিশের আইজিপি, এসবি, র‌্যাব, পুলিশ কমিশনার পদে পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ছাড়াও সব জেলায় পুলিশ সুপারসহ থানায়ও পরিবর্তন আসছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরদিন থেকেই দেখা যায়, পদোন্নতিবঞ্চিত বিভিন্ন ক্যাডার ও নন ক্যাডার কর্মকর্তারা সচিবালয়ে প্রতিদিনই আন্দোলন করছেন। জনপ্রশাসন সচিব ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিও দেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের প্রধান হিসেবে যারা সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তা বলে পরিচিত ছিলেন তাদের ইতোমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো যারা আছেন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তাদের অনেকেই দায়িত্ব হারাতে পারেন। বিগত সরকারের আস্থাভাজন কর্তাব্যক্তিদের সরিয়ে ১৬ বছর ধরে বঞ্চিত যোগ্য ও তুলনামূলক নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ইমেজের কর্মকর্তাদের পদায়ন হতে পারে। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনের বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার আমলের সচিবদের ওএসডি করে নতুন করে সচিব পদায়ন করলে কাজের গতি পাবে। ইতোমধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া মোট ১৯ জন পূর্ণ সচিবের মধ্যে ১০ জনের নিয়োগ ১৪ আগস্ট বাতিল করা হয়েছে। বাকিদের নিয়োগও বাতিল হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) মো. মোকাব্বির হোসেনকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানকে কৃষি সচিব করা হয়েছে।

এ ছাড়া গত ১৩ আগস্ট দীর্ঘদিন যাবৎ বঞ্চিত বিসিএস ১১ থেকে ২৯ ব্যাচের ১১৭ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে। তাদের সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া প্রশাসনে যারা শেখ হাসিনা সরকারের আস্থাভাজন ও প্রভাবশালী বলে পরিচিত সিনিয়র সচিব ও সচিব, তাদেরও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হতে পারে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে বদলি করে কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরেও পাঠানো হতে পারে কাউকে কাউকে।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের এ তালিকায় রয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম, সড়ক ও পরিবহন বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লাহ নুরী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম ওয়াহিদা আক্তার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য (সচিব) মো. খাইরুল ইসলাম। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তি বাতিল করা হয়।

বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পুরোপুরি সফল হতে হলে পুরনো প্রশাসন বহাল রাখা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। কারণ, তারা আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেষ্টা করবে। দ্রুত তাদের সরিয়ে বিভিন্ন সময়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে।

পদোন্নতিবঞ্চিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি বিসিএস ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার ব্যাচমেটরা দেড় বছর আগেই সচিব হয়েছেন। অথচ আমি এখনো সিনিয়র সহকারী সচিব পদে আছি। ভালো দক্ষ কর্মকর্তা বলে আমাকে ওএসডি করা হয়নি। রাজনৈতিক তকমা দিয়ে আমাকে ১৬ বছর পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছে। আমার কপালে কোনো পদোন্নতি জোটেনি। আমার মতো প্রশাসনে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, যারা ১৬ বছর ধরে একই পদে কর্মরত। শত শত কর্মকর্তা বছরের পর বছর ওএসডি থেকে অবসরে গেছেন। আমরা এ সরকারের কাছে প্রতিকার চাই। আমাদের মতো যারা পদোন্নতিবঞ্চিত, তাদের দ্রুত পদোন্নতি দিতে হবে।’

এদিকে মাঠ প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক হিসেবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের সরকারের আস্থাভাজন ও দক্ষ কর্মকর্তা বলেই মনে করা হয়। বর্তমানে বিভাগীয় কমিশনার পদে ঢাকা ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ১৫তম ব্যাচের এবং বাকিগুলোতে ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক পদে বর্তমানে বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের অনেকে ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এক মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারের গতির জন্য প্রশাসন অন্যতম ভূমিকা রাখে। প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা সাবেক সরকারের কট্টর সমর্থক বলে পরিচিত, তাদের হয়তো ওএসডি বা কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করা হতে পারে। যারা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত, তারা পদোন্নতি না পাওয়া পর্যন্ত বড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যোগ্যতার অভাবে পোস্টিং পাবেন না। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ইমেজের কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন।  

দৈনিক জামালপুর