• বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৩১ ১৪৩১

  • || ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ কোর্স আমার লেখক সত্তাকে উসকে দিয়েছিল

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২৪  

ঢাকা কলেজে অনার্স শেষবর্ষে পড়ি। থাকতাম শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাসে। সকালে পত্রিকা পড়তে গিয়ে বাংলা একাডেমির একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। ছয়মাস মেয়াদি তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণার্থী আহŸান করে আবেদন হয়েছে। 

তখন পর্যন্ত আমার বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ ও ফিচার বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং সাময়িকীতে ছাপা হয়েছিল। আবেদন করার যোগ্যতা ছিল। আমি তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ কোর্সটিতে আবেদন করি। কিছুদিন পরে  মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হলো। মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছিলেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যার। অতঃপর কিছুদিন পরে ফোনে জানানো হলো আমি প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। পরে হোস্টেলের ঠিকানায় পত্রও এসেছিল। আমি যথারীতি কোর্সটিতে ভর্তি হই। সেই অনুভ‚তি কখনো ভুলবার নয়।
 
 প্রশিক্ষণার্থীবৃন্দের সঙ্গে শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (বাঁ দিক থেকে ৪র্থ, দাঁড়ানো)
আমি ২০১০ সালে তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ কোর্স-এর প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণ গ্রহণের কথা বলছি। উল্লেখ্য, বাংলা একাডেমিতে ১৯৯৪ সালে প্রথম তরুণ লেখক কোর্স শুরু হয়েছিল। এই কোর্সটির স্বপ্নদ্রষ্টা তৎকালীন মহাপরিচালক মনসুর মুসা এবং প্রাক্তন পরিচালক ও পরবর্তীকালে মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। আমি ২০১০ সালে এ কোর্সে যুক্ত ছিলাম বলে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। মনে পড়ে ২০১০ সালে প্রথম ব্যাচে এ কোর্সের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। উক্ত অনুষ্ঠানে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, হায়াৎ মামুদ ও তৎকালীন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বক্তৃতা করেছিলেন। ২০১০ সালের প্রথম ব্যাচে এ কোর্সে ২০জন প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। কোর্সটির পরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ আবদুল হাই।
২০১০ সালে তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ কোর্স-এর প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী এখন খ্যাতিমান লেখক। এ ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে মামুন খান, শারদুল সজল, শাকিল মাহমুদ, মনির ইউসুফ, শিমুল সালাহ্উদ্দিন প্রত্যেকে প্রতিষ্ঠিত কবি। শেখ মেহেদী হাসান একজন গবেষক, প্রাবন্ধিক ও গল্পকার। ফরহান ইশরাক একজন বিশিষ্ট কবি এবং বাংলা একাডেমির উপপরিচালক। কামরান পারভেজ একজন গল্পকার। চাণক্য বাড়ৈ কবি ও কথাসাহিত্যিক। বহ্নি কুসুম একজন কবি, সম্পাদনা করেন ‘অনশ^র’ ও ‘গল্পঘর’ নামে দুটি ছোটকাগজ। আশিক মুস্তাফা শিশুসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি। শামস্ নূর বাংলা একাডেমির পাÐুলিপি সম্পাদক ও পত্রিকা উপবিভাগে কিশোর সাহিত্যপত্র ‘ধানশালিকের দেশ’-এ সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। কমল কর্ণেল একজন কথাসাহিত্যিক। রন্তিক বিপু খ্যাতিমান নাট্যনির্দেশক। এরা প্রত্যেকেই লিখছেন, রয়েছে একাধিক বই। সাহিত্যমহলে এদের পরিচিতি রয়েছে। 
লেখালেখি শেখানোর জিনিস নয়। স্বপ্রণোদিত হয়ে আসে। প্রশিক্ষণ দিয়ে লেখক তৈরি হয় না। এ কথাগুলি অনেকেই বলবেন। তারপরও আমি এ ধরনের প্রশিক্ষণকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। অন্তত কিছু জিজ্ঞাসা, অনুভ‚তিকে উসকে দেয়। এই কোর্সে নানা ধরনের বইপত্রের খোঁজখবর, লেখকের প্রস্তুতি, ছন্দ, ভাষাজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়। অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে লেখার জায়গাটা পরিষ্কার হয়। লেখালেখির ক্ষেত্রে সতর্কতা বাড়ায়। এতে করে সাহিত্য ও সৃজনভাবনাকে উন্নীত করা যায়। একজন লেখককে বিচরণের ক্ষেত্র জানতে চিনতে সাহায্য করতে পারে। ভাষা ও প্রকাশভঙ্গিতে দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

২০১০ সালে তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ কোর্স-এর প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় প্রশিক্ষক হিসেবে বাংলা ভাষার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট লেখককে পেয়েছি। তাঁদের মধ্যে কবীর চৌধুরী (১৯২৩-২০১১), রফিকুল ইসলাম (১৯৩৪-২০২১), মনজুরে মওলা (১৯৪০-২০২০), খোন্দকার আশরাফ হোসেন (১৯৫০-২০১৩), শফি আহমেদ, অসীম সাহা, শামীম আজাদ, হায়াৎ মামুদ, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া প্রমুখের নাম অন্যতম। অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া মধ্যযুগের বাংলা কাব্য শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তাঁর সেই আলোচনার স্মৃতি আজো মনে গেঁথে রয়েছে। কবি অসীম সাহা ডিরোজিও সম্পর্কে বলেছিলেন। সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলার ইতিহাস বিষয়ে বলেছিলেন। অন্যান্য প্রশিক্ষকগণও চিরায়ত সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রতিটি আলোচনা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও অংশগ্রহণমূলক ছিল।
বাংলা একাডেমি পরিচালিত তরুণ লেখক কোর্স আমার লেখক হওয়ার প্রেরণাদাতা। এই কোর্স আমার সম্মুখে যে পড়াশোনা, গবেষণা কাজের বিস্তৃতি খুলে দিয়েছে তা অফুরন্ত। সেই জ্ঞানের আলোকবর্তিকা আজো বয়ে চলেছি, তরুণ লেখক কোর্সের কাছে আমার ঋণের শেষ নেই।

 লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক। ২০১০ সালে তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ কোর্স-এর প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী।
 

দৈনিক জামালপুর