• শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

খাগড়াছড়ির ঘটনা নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সৃষ্ট একটি ঘটনার জেরে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগে এখন পর্যন্ত তিনজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন, যা শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। যদিও মূল ঘটনা আড়াল করে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
জানা গেছে, দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ির ঘটনা নিয়ে সবাই জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সত্যিটা কেউ বলছে না। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কারোরই কাম্য নয়, কিন্তু সত্যিটা জানার অধিকার সবারই আছে। সত্যিকারের ঘটনা হলো- গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় একটি মোটরসাইকেল চুরির বিষয়কে কেন্দ্র করে মো. মামুন (৩০) নামে এক বাঙালিকে কিছু উপজাতি নির্যাতন করে। পরবর্তীতে স্থানীয় জনসাধারণ তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিলে সেখানে কর্তব‍্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বিষয়টি নিয়ে বাঙালিদের মধ‍্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং গতকালই খাগড়াছড়ি, বাঘাইহাট, মহালছড়ি এবং দীঘিনালাসহ কিছু স্থানে বাঙালি সম্প্রদায় মিছিল করে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ পাহাড়ি-বাঙালি উভয় সম্প্রদায়কে বিষয়টি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসার জন‍্য এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব‍্যবস্থা গ্রহণের জন‍্য প্রেষণা প্রদান করা হয়।

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে বাঙালি সম্প্রদায় বোয়ালখালি বাজার ও দীঘিনালাতে একটি মিছিল বের করে। সেখানে উপজাতিদের আক্রমণে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে বিক্ষিপ্তভাবে পাহাড়ি ও বাঙালিরা বোয়ালখালি বাজারের প্রায় ৫০টি দোকানে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তৎক্ষণাৎ সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। সংঘর্ষে প্রায় ১৫-২০ ব‍্যক্তি আহত হন। অগ্নিনির্বাপণের জন‍্য দীঘিনালা এবং খাগড়াছড়ি সদরের ফায়ার সার্ভিস সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলেও উপজাতীয়দের বাধার কারণে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। সেনাবাহিনীর নিজস্ব চেষ্টায় এবং পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

এরই মধ্যে একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নালকাটা এলাকার উপজাতীয়রা অফিসারের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি গুরুতর রোগী বহনকারী দলকে ঘেরাও করে গতিরোধ করে। তাদের উদ্ধার করার জন্য খাগড়াছড়ি জোন উপ-অধিনায়কের নেতৃত্বে আরেকটি সেনাবাহিনীর টহল দল ঐ স্থানে গমন করতে গেলে স্বনির্ভর বাজার এলাকায় তাদেরকেও উপজাতি জনতা ঘেরাও করে। এরই মধ্যে ইউপিডিএফ এর কিছু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জনতার মধ্যে ঢুকে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে ঐ সেনাদলকে উদ্ধার করার জন্য খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডারের নেতৃত্বে আরো একটি সেনাদল সেখানে যাওয়ার জন্য বের হলে তাদেরকেও উপজাতিরা ঘেরাও করে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও উপজাতীয়রা ঘেরাও অব্যাহত রাখে ও তারা শত শত টর্চ লাইট প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সেনা টহলদলের সদস্যদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে ইউপিডিএফ এর দুর্বৃত্তরা সেনা টহলদলকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী প্রথমে মেগা ফোনের মাধ্যমে বারবার তাদেরকে সতর্ক করে ও পরবর্তীতে আকাশের দিকে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে সতর্ক করার চেষ্টা করে। এতে উত্তেজিত জনতা নিবৃত্ত না হয়ে সেনাদলের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে। এ পর্যায়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে আরো দুটি বিজিবি টহলদল সেখানে যায়। রাতের অন্ধকারে উত্তেজিত পাহাড়িদের মধ্য থেকে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি করলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র সাতজন সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়।

আহতদের নিরাপত্তা বাহিনী উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে একজন সন্ত্রাসী মারা যায়। এছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনী সাতজন দুষ্কৃতিকারীকে আটকসহ একটি অস্ত্রের ম্যাগাজিন উদ্ধার করে।

উল্লেখ্য, ম্যাগাজিনটি ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা খালি ম্যাগাজিন। পরবর্তীতে আটককৃত ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনার পর অদ্যাবধি খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে স্বার্থান্বেষী গ্রুপ প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।

দৈনিক জামালপুর