• বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৮ ১৪৩১

  • || ০৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেখ হাসিনার নামে আরও ৪টি হত্যা মামলা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৪  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ জনকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও চারটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। 
আজ বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়। আদালত চারটি মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। এসব মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক,সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল¬াহ আল মামুন,  সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, সাবেক  সংসদ সদস্য মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশসহ ১১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মিরপুরে র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী ফিরোজ তালুকদারকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসানের আদালতে মামলাটি করেন নিহতের স্ত্রী রেশমা সুলতানা। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। 
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল¬াহ আল মামুন। 
মামলার অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নির্দেশে অন্য সব আইনজীবী তথা অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত উপেক্ষা করে একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন। তার রায় আদালতের আকাক্সক্ষা উপেক্ষা করে দেশে অঘোষিত স্বৈরতন্ত্র কায়েমপূর্বক শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের যথেচ্ছভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রয়োগের অনুমতি প্রদান করে। 
পরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা ও অন্য আসামিরা নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় গণমানুষের স্বাভাবিক উপস্থিতি ব্যতীত কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে মানুষের ওপর জুলুম, নির্যাতন ও বাকস্বাধীনতা খর্ব করাসহ খুন, গুম ও ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা ও নিষ্পেষণ অব্যাহত রাখে। 
একপর্যায়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। সরকার হত্যা, গুম ও গ্রেফতারের মাধ্যমে দমনপীড়ন করলে আন্দোলনকারীরা সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে তাদের পাশে অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের নির্দেশে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা দেশব্যাপী আন্দোলন দমনের জন্য ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে গুলি করতে থাকে। 
আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিরপুর-১০ গোলচত্বরে র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে ফিরোজ তালুকদার গুরুতর আহত হন। তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর রামপুরায় রাসেল মিয়া নামে একজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। 
বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমীর আদালতে এ মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে রামপুরা থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। 
মামলার উলে¬খযোগ্য আসামিরা হলেন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল¬াহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি রিপন সরদার, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদ, সাবেক সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান ও  সাবেক র‌্যাব ডিজি হারুন-অর-রশীদ। 
মামলায় অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর রামপুরায় আসামিদের নির্দেশে গুলিতে রাসেল মিয়া নিহত হন। 
অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে এলেম আল ফায়দি নামে এক শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। 
বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে সামসুল আরেফিন নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী এ মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি সূত্রাপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। 
মামলার উলে¬খযোগ্যরা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক আবদুল¬াহ আল মামুন, সাবেক কমিশনার (ডিএমপি) হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ¬ব কুমার, ওয়ারীর ডিসি ইকবাল হোসেন, ঢাকা-৬ আসনের সাবেক এমপি আবু সাইদ খোকন ও ঢাকা-৭ এর সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম। মামলার এজাহারে বাদী উলে¬খ করেন, গত ১৯ জুলাই লক্ষ্মীবাজার এলাকায় জুম্মা নামাজ আদায়ের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ আপামর জনগণ বৈষম্যবিরোধী মিছিল শুরু করেন। বৈষম্যমুক্ত একটি মানবিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ¯ে¬াগান দিয়ে রাজপথে অবস্থান করে। আসামিরা গণভবনে বসে তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার নির্দেশ দেন। আসামিরাসহ আরও ৫০ থেকে ৬০ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ এবং পুলিশের ৬০ থেকে ৭০ জন সদস্য একযোগে শান্তিপ্রিয় নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। 
১৯ জুলাই দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে সরকারি কবি নজরুল কলেজের সামনে গুলিতে এলেম আল ফায়দি নামে একজন শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ান গুরুতর আহত হন। গুলিতে তার মাথার মগজ বের হয়ে যায়। 
এদিকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হক হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, নিঝুম মজুমদার ও মুনতাসীর মামুনসহ ৪৯ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। 
বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালতে ৪৯ জনের জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন নিহতের বড় ভাই তারিকুল ইসলাম। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে তেজগাঁও থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। 
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, চৌধুরী আব্দুল¬াহ আল মামুন, হারুন-অর-রশীদ, বিপ¬ব কুমার, হাবিবুর রহমান, সাদেক খান ও শাহজাহান খান। 
গত ৪ আগস্ট তেজগাঁও থানার ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে সড়কে গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিইচ্ছুক শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হক।

দৈনিক জামালপুর