• বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৮ ১৪৩১

  • || ০৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় নিতে বললেন ব্যবসায়ীরা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৪  

দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ব্যবসায়ীরা ১৩ দফা সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য তড়িঘড়ি না করে প্রয়োজনীয় সময় নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আহ্বান জানান তাঁরা। এতে ব্যবসায়ীদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক সৌজন্য সাক্ষাতে ব্যবসায়ী নেতারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তাঁদের সুপারিশ তুলে ধরেন।

 
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্ব অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, তপন চৌধুরী, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, এ কে আজাদ, সিমিন রহমান, খন্দকার রফিকুল ইসলাম, নাসের এজাজ বিজয়, ফজলুল হক, মোহাম্মদ হাতেম প্রমুখ।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যবসায়ী নেতাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তাঁর সরকার প্রশাসনকে অর্থনৈতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেশ নাজুক অবস্থায় পেয়েছে। তবে তিনি নিশ্চিত, প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব।

বর্তমানে দেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,  ‘তবে প্রয়োজনীয় সংস্কারের এটা বড় সুযোগ। এটা আমাদের জন্য কঠিন হলেও সম্ভব।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি একটি জাতি হিসেবে সম্মিলিতভাবে এই দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে। বিশ্ব আমাদের সঙ্গে আরো ব্যবসা করতে চাইবে।


প্রতিনিধিদলকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জাতি হিসেবে মহানুভবতা অর্জনের জন্য বৃত্তের বাইরে চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি তরুণদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমরা জাতির স্বপ্নকে সত্যি করতে পারব।’

অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তাড়াহুড়া না করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার আহ্বান জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, আগের সরকার দেশকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিয়েছে। তাঁরা বলেন, ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব প্রশাসন, শিক্ষা ও শিল্পে গভীর সংস্কার ও পুনর্গঠন প্রয়োজন।

আইসিসিবি প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যা ঘটেছে, আমরা তার সাক্ষী।

বাংলাদেশের বেসরকারি খাত শত ভাগ আপনার সঙ্গে আছে।’
 

ব্যবসায়ীদের ১৩ প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে

অর্থনৈতিক অঞ্চল, কারখানা এবং শিল্প উৎপাদনের অন্যান্য স্থানে যৌথ বাহিনীর দ্বারা অবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা। শিল্প, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, মহাসড়ক এবং ফুটপাতের মতো সব এলাকায় চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, যাতে পুরো সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত না হয়। সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে।  হ্রাসকৃত দামে মুদ্রাস্ফীতি থাকবে, যা ট্রেজারি বন্ডের ওপর চাপ কমিয়ে দেবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনায় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত করা। আর্থিক খাতের ঋণখেলাপি কমাতে একটি পথ নকশা তৈরি করা। ইচ্ছাকৃত ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং পাচার করা অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এনবিআরের দুটি পৃথক শাখা থাকতে পারে : একটি নীতিনির্ধারণের জন্য এবং অন্যটি কর, কাস্টম এবং ভ্যাট সংগ্রহের জন্য। কর জালের কার্যকর সম্প্রসারণ এবং অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা ও মূল্যায়ন। সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন (অটোমেশন)। স্বাধীন আপিল বোর্ড পুনর্গঠন নিশ্চিত করা। দেশের সব বন্দরে শুল্ক ছাড়পত্র সংস্কার। পণ্যের লেনদেনের মূল্য বা পরিমাপের এককের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা।

বাংলাদেশ ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আন্ত সীমান্ত কাগজবিহীন বাণিজ্য সুবিধার বিষয়ে ইউএন-ইএসসিএপি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা পরে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ দ্বারা অনুসমর্থন করা হয়েছিল৷ কিন্তু এটি এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি৷ অতএব, সমগ্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে ডিজিটাইজ করার জন্য বাণিজ্যিক আইন প্রণয়ন/সংশোধন করা প্রয়োজন (ইস্যু ইনভয়েস, চুক্তি, বিল অব লেডিং ইত্যাদি থেকে)। এটি প্রতারণা এবং অর্থপাচার কমাতে সহায়তা করবে।

শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এলএনজি এবং এলপিজির ব্যয়বহুল আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে উপকূল ও উপকূলে নতুন গ্যাস মজুদ শনাক্ত/অন্বেষণের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাপেক্সকে শক্তিশালী করা। বিদ্যমান বিদ্যুৎ উৎপাদন কম ব্যবহার করায় নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করা । 

নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।  আইসিটি সেক্টরের সবচেয়ে বড় রপ্তানি আয়কারী খাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তি খাত ১৮০ কোটি ডলার রপ্তানি করে।

নতুন রপ্তানি বাজার চিহ্নিত করতে এবং দক্ষ ও অদক্ষ উভয় কর্মীদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টিতে অর্থনৈতিক কূটনীতি অনুসরণে বাংলাদেশ মিশনের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। জনশক্তি খাতে অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে। বিদেশে কর্মী প্রেরণকারী সংস্থাগুলোকে কঠোরভাবে নজরদারি করা উচিত এবং এজেন্সিগুলোর দ্বারা তাদের চাকরি নিশ্চিত করা উচিত। আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্সকে উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

দৈনিক জামালপুর